বর্তমানে সকলের জীবনে Google Adsense একটি বহু পরিচিত নাম। যারা কোন বিষয় নিয়ে কিছু জানার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন তারা যে কোন তথ্য গুগল থেকে পাওয়ার একটি বড় বিকল্প আর নেই।
বর্তমানে বিশ্বের যে সকল লোকেরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে তারা গুগল এর মাধ্যমে কাজ করেন। তাই যে কোন বিষয় নিয়ে বা ইন্টারনেটে কাজ করার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন হয় গুগল কে। আমরা জানি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত কোম্পানি হচ্ছে গুগল। গুগল আবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় একটি এড নেটওয়ার্ক।
গুগলে লক্ষ লক্ষ পাবলিশার কাজ করে থাকে। গুগল অনেক জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত বলে বর্তমানে এ অবস্থায় এসে দারিয়েছে। গুগলের সাথে বর্তমানে প্রতিযোগীতা করার মতো কোন কোম্পানি এখনও সৃষ্টি হয়নি।
আমরা আজকের এই আর্টিকেলে আপনাকে জানাব গুগল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আপনি যদি গুগল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তবে আমাদের এই আর্টিকেল ভালো ভালো পড়ুন।
গুগল অ্যাডসেন্স কি?
সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলের একটা সার্ভিস হলো এই এডসেন্স বা গুগল এডসেন্স। যার মাধ্যমে গুগল ইউটিউবারদের চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে এবং ব্লগারদের ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে তার বিনিময়ে ইউটিউবার এবং ব্লগারদেরকে টাকা দেয়। সহজ কথায় এটি একটি অ্যাডভার্টাইজমেন্ট পাবলিশিং প্রোগ্রাম যা গুগলের নিজস্ব প্রোডাক্ট। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, ইউটিউবের ভিডিওতে বা ব্লগে বিভিন্ন রকমের অ্যাড দেখতে পাওয়া যায়! যা এই গুগল অ্যাডসেন্স এর উদাহরণ! কেননা এই এডগুলি গুগল অ্যাডসেন্স মাধ্যমে দেওয়া হয়ে থাকে! যাতে ক্লিক করলে কিংবা ভিজিট করলে আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ইনকাম করতে পারবেন!
ব্লগ অথবা ইউটিউব থেকে যারা আয় করতে চাচ্ছেন Google AdSense হলো তাদের জন্য ইনকামের একটি পারফেক্ট মাধ্যম! যার প্রমাণ আমাদের আশপাশেই রয়েছে। যারা কিনা এই ব্লগ ওয়েবসাইট বা ইউটিউবকে কাজে লাগিয়ে গুগল এডসেন্সকে পুঁজি করে বেশ ভালোই ইনকাম জেনারেট করছে। আপনিও তাদের পথ অনুসরণ করে এই সেক্টরে সফল হতে পারেন!
গুগল এডসেন্স একাউন্ট খুলতে কী কী প্রয়োজন?
চলুন এবার জেনে নিই গুগল এডসেন্স একাউন্ট খুলতে কী কী তথ্যের প্রয়োজন পড়েঃ-
- গুগল এডসেন্স একাউন্ট খুলতে একটি জিমেইল একাউন্টের দরকার পড়বে!
- একাউন্ট ভেরিফাই করার জন্য একটি সচল মোবাইল নাম্বার লাগবে।
- ভেরিফিকেশনের চিঠি পাঠানোর জন্য একটি রিয়েল ঠিকানা লাগবে।
- শেষ অংশে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে অনলাইন টাকা আয়/ইনকাম করার সবচেয়ে দরকারি উপকরণ অর্থ্যাৎ ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল লাগবে।
যদি আপনি উপরের উপকরণগুলি নিশ্চিত করতে পারেন তবে আপনি ইজিলি গুগল এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করতে পারবেন!
কখন অ্যাডসেন্স এপ্লায় করতে হয়?
ব্লগ সাইটের ক্ষেত্রে আপনার ব্লগ সাইট বা ওয়েবসাইটে যত বেশি ইউনিক পোষ্ট থাকবে তত সহজে এডসেন্স পাওয়া যাবে। তবে আমার মতে ওয়েবসাইটে সর্বনিম্ন ৫০’টির উপরে পোষ্ট থাকাটাই সবচেয়ে সিকিউর উপায়! তবে আপনি নিয়মিত পোষ্ট লিখতে থাকুন! একটা সময় গিয়ে যখন দেখবেন আর্টিকেলের পরিমাণ ৪০ এর উপরে ৫০ এর চৌকাঠে পা দিয়েছে তখনই আপনি গুগল এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করার সিদ্ধান্ত নিবেন!
তবে এক্ষেত্রে আপনি যদি ইউনিক এবং কোয়ালিটি কন্টেন্ট না দিয়ে যেনোতেনো কন্টেন্টে সাইট ভরিয়ে তুলেন তবে এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করেও কোনো লাভ হবে না! কেননা Google AdSense কতৃপক্ষ পরবর্তীতে আপনার এই আবেদনকে নাকোচ করে দিবে। সাথে এটিও মাথায় রাখবেন যেনো প্রতিটি ক্যাটাগরিতে ৫ টির বেশি কন্টেন্ট থাকে। কোনো ক্যাটাগরি মোটেও খালি রাখা যাবে না। পাশাপাশি ওয়েবসাইটে About us, Contact Us , Privacy policy পেইজগুলি আছে কিনা তা চেক করে না থাকলে ক্রিয়েট করে নিতে হবে।
গুগল অ্যাডসেন্স এপ্রোভাল টিপস
চলুন এবার গুগল অ্যাডসেন্স এপ্রোভাল টিপস সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
ব্লগ সাইটের ক্ষেত্রেঃ
যাদের লেখালেখি করার অভ্যাস করা অভ্যাস রয়েছে তারা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গুগল এডসেন্স ব্যবহার করে ইনকাম জেনারেট করতে পারেন! এক্ষেত্রে কয়েকটি যেনেতেনো কন্টেন্ট লিখে ইচ্ছেমতো এপ্লাই করলেই না! আপনাকে বেশ কিছু টিপসও মেনে চলে হবে। টিপসগুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ-
শব্দ সংখ্যাঃ
আপনি একটি ২০০ শব্দের পোস্ট লিখে তা ওয়েবসাইটে পাবলিশ করলে এবং এমন করে করে অসংখ্য পোস্ট করে ভাবলেন অনেক পোস্ট করা হয়ে গেছে। এবার নিশ্চয় এডসেন্স এপ্রুভ হয়ে যাবে! এই টাইপের চিন্তাভাবনা কিন্তু পুরোপুরি ভুল। মাত্র ২০০ শব্দে কি কখনো যেকোনো টপিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যায়? অবশ্যই যায় না!
একটি ব্লগে সাধারণত খোলামেলা আলোচনা করে টপিক সম্পর্কে পুরোপুরি উপস্থাপন করতে হয়। সুতরাং গুগল অ্যাডসেন্স এপ্রুভ পেতে ব্লগ পোস্টগুলি সর্বনিম্ন ৫০০ শব্দের করে লিখুন। তবে আপনি যদি ব্লগের শব্দে সংখ্যার স্ট্যান্ডার্ড মান সম্পর্কে জানতে চা আমি বলবো ৫০০ শব্দ ব্লগিংয়ের জন্য কোনো সংখ্যাই না। একটি ব্লগ পোস্টে ১০০০ বা ততোধিক শব্দের কন্টেন্ট লিখতে পারলেই সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। যদিও ৫০০ থেকে ৮০০ শব্দের ব্লগগুলো মাঝামাঝি আকারের ব্লগ হিসেবে গণ্য হবে।
ব্লগ বা ওয়েবসাইটে লেখার শুরুতেই কপিরাইট কন্টেন্ট বাদ দিতে হবে। একটি সিংগেল লাইনও কপি পেস্ট করে ব্লগসাইটে আপলোড করেন তবে অ্যাডসেন্স এপ্রুভ পেতে সমস্যায় পড়তে হবে। মনে রাখবেন কারো লেখা চুরি করে ব্লগিং ক্যারিয়ারে বেশিদূর আগাতে পারবেন না। আপনি যদি কোনভাবেই একজনের লেখা চুরি করে নিজের ব্লগে/ওয়েবসাইটে পাবলিশ করেন এক্ষেত্রে গুগল খুব সহজে তা ধরে ফেলতে পারবে! সুতরাং সাবধান! বেশি চালাকি করে নিজের ব্লগের বারোটা বাজাতে যাবেেন না।
পেইজ সংখ্যাঃ
অনেক সময় আপনারা ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করে বিভিন্ন পোস্ট আপলোড করেই এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করে ফেলেন। পরবর্তীতে দেখা যায় কতৃপক্ষ তা রিজেক্ট করে দিয়েছে। এর বেশ কয়েকটি কারণের মাঝে আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটটি গুগলের কাছে ভিত্তিহীন হিসেবে পরিচিতি পাওয়াটাও একটি কারণ। কেননা একটি ব্লগ সাইটে যে চারটি পেজ থাকা বাধ্যতামূলক তা আপনার সাইটে নেই। ফলে গুগলের কাছে আপনার সাইটের কোনো গুরুত্বই নেই। সুতরাং এই ৪ টি পেইজ নিশ্চিত করে তবেই গুগল এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করবেন৷
আপনার সাথে কন্টাক্ট করা যায় এমন একটি পেইজ তৈরি করে তা গুগলে ইনডেক্স করিয়ে নিবেন। এক্ষেত্রে অনলাইনে কন্টাক্ট ফর্ম এর প্রুচর কোড পাওয়া যায়! এর যেকোনো একটি পছন্দ করে তা সেট করে নিবেন। আপনার ওয়েবসাইট টি কি রিলেটেড এবং এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি কোন ধরণের সার্ভিস বা পোস্ট দিচ্ছেন তা পুরোপুরি লিখে এবাউট আস নামের পেইজটি ক্রিয়েট করে গুগল ইনডেক্স পর্ব সেরে ফেলবেন। আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট কিছু শর্ত সেট করে নিবেন। যা গুগলের কাছে আপনার ওয়েবসাইটকে অর্থবহ করে তুলবে। এই পেইজটিকেও ইনডেক্স করে নিতে হবে। সবশেষে আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগের নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রাইভেসি পলিসি নামক একটি পেইজ তৈরি করে তা গুগল ইনডেক্স করিয়ে নিয়ে তবেই গুগল এডসেন্সের জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিবেন।
আজকে ব্লগ বা ওয়েবসাইট খোলে কালকেই সেটিতে গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল নেওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না। কমপক্ষে ১ মাস সময় নিবেন! ২/৩ মাস হলে আরো বেশি ভালো। ব্লগে ৫০+ পোস্ট হলে যদি এপ্লাই করেন তবে খুব দ্রুত গুগল এডসেন্স এপ্রুভ পেয়ে যাবেন।
ইউটিউবের ক্ষেত্রেঃ
ইউটিউব ব্যবহার করে যদি গুগল এডসেন্স থেকে ইনকাম জেনারেট করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই কপিরাইট ফ্রি ভিডিও আপলোড করতে হবে। সেই সাথে কোনো ধরণের এডাল্ট ভিডিও তো মোটেও পাবলিশ করা যাবে না। ইউটিউবের ক্ষেত্রে Google AdSense আবেদনের আগে আপনাকে এক বছরে 4000 ঘন্টা ওয়াচ টাইম এবং 1000 সাবস্ক্রাইব নিশ্চিত করতে হবে। এটি আবশ্যক।
সব কিছু সঠিক ভাবে সম্পন্ন হবার পরেই আপনি এপ্লায় করার সুযোগ পাবেন।
পরিশেষেঃ
আশা করি গুগল এডসেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পেরেছি। গুগল এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করার আগে এ-ব্যাপারে পুরোপুরি জেনে-বুঝে নেওয়া উচিত। নতুবা পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে আপনার মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করবেন।