আপনি যদি ব্যবসায় সফল হতে চান অথবা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং ফানেল সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকতে হবে। কারণ সফলতার মূলমন্ত্র আসলে সেলস ফানেল এর ভেতরেই লুকায়িত। আপনি যখনই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ই-কমার্স বিজনেস ইত্যাদি নিয়ে পরিকল্পনা করবেন তখনই সবার আগে আপনার সেলস ফানেল নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
আপনার যদি সেলস ফানেল নিয়ে মাথা ব্যাথা না থাকে তাহলে আপনার বিজনেস এর মার্কেটিং হবে ঠিকই কিন্তু সেল হবেনা। প্রথম প্রথম একটু সেল হলেও এক পর্যায়ে এসে সেল বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সেলস ফানেল টা সবার বিজনেস এর জন্যই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ডিজিটাল মার্কেটিং ফানেল কিঃ
পণ্য বিক্রয় করার একটি মাধ্যম হচ্ছে ফানেল। এর সাহায্যে কোল্ড কাস্টমার কে হট কাস্টমারে কনভার্ট করা হয়। আপনার নিশ্চয়ই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে ধারণা আছে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে কোন পণ্য কমিশন ভিত্তিক বিক্রয় করার মাধ্যম। আপনি আমাজন, আলিবাবা এমন কি বাংলাদেশের ই-কমার্স দারাজের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। আপনি যদি অ্যামাজন থেকে কোন প্রোডাক্ট অ্যাফিলিয়েট লিংক পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি নিশ্চয়ই আগে ট্রাফিক জেনারেট করতে ব্যস্ত হয়ে যাবেন। এখানেই আপনি সবচেয়ে বড় ভূল টা করে বসেন।
কারণ অ্যাফিলিয়েট লিংক পাওয়ার পর আপনার মেইন কাজ হচ্ছে প্রডাক্ট টি কে সেল করা, কারণ প্রোডাক্ট টি সেল করার মাধ্যমেই আপনি কমিশন পাবেন। তাই আপনার প্রথমেই চিন্তা করতে হবে কিভাবে প্রোডাক্ট টির তথ্য সবার কাছে তুলে ধরলে ভালো সেল হবে। কিন্তু নতুন যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ কাজ করতে আসে তারা আগে ট্রাফিক জেনারেট করে এবং দিন শেষে কেও পণ্য টি ক্রয় করে না এবং সে কমিশন ও পায়না। ধরুন আপনি খুবই ব্রোনের সমস্যায় ভুগছেন। ঘুম থেকে উঠেই ফোনের নোটিফিকেশন চেক করা মাক্সিমাম সবারই হ্যাবিট।
নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে দেখলেন আপনার এক ফ্রেন্ড আপনাকে একটি লিংক পাঠিয়েছে, ব্রোনের জন্য একটি প্রোডাক্ট কিনতে, যার একটি বিজনেস আছে। ব্রণ নিয়ে আপনার মেজাজ এমনিতেই খারাপ, তারপর সকালে ঘুম থেকে উঠে এরকম লিংক দেখে আপনার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেলো। এখন নিশ্চয়ই আপনি প্রোডাক্ট টি কিনবেন না, বড় জোর লিংক টা ওপেন করে দেখতে পারেন ফরমালিটিস এর কথা ভেবে। আপনার প্রডাক্ট টি না কেনার কারণ হচ্ছে আপনার ফ্রেন্ড সেটা কেনার জন্য জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে বলা চলে৷ প্রোডাক্ট টি কেনার ফলে আপনি কি বেনেফিট পেতে পারেন তা বলে নি। তাই ইনসিকিউরড ফিল করে আপনি প্রোডাক্ট টা কিনবেন না।
আরও একটি বাস্তব উদাহরণ দেওয়া যাক। আমার আপু যখন স্কুলে পড়তো তখন পাশের কলেজের ২টা ছেলে সোহাগ এবং পরশ দুই জনই আপু কে পছন্দ করতো। আপু দেখতে সুন্দর হওয়ায় মাক্সিমাম ছেলের ওয়ান্টেড লিস্টে ছিলো। সোহাগ দেখতে যেমন ছিল সুন্দর তেমনই স্মার্ট। অপরদিকে পরশ দেখতে তেমন সুন্দর ছিলো না। দুই বন্ধুই চ্যালেঞ্জ নিলো আপুকে পাওয়ার জন্য। সোহাগ যেহেতু দেখতে সুন্দর ছিলো তাই সে কনফিডেন্সের সাথে আমার আপু কে গিয়ে ডিরেক্ট প্রোপোস করে বসে কিন্তু আপু সাথে সাথেই রিজেক্ট করে।
অপরদিকে তার ২মাস পর যখন পরশ আপুকে প্রোপোস করে তখন আপু রাজি হয়ে যায়। আমি তো ভীষণ অবাক! সোহাগ এতো সুন্দর তাও আপু সোহাগের পরিবর্তে কেনো পরশ এর সাথে প্রেম করলো। কিউরিয়াস হয়ে আপু কে জিজ্ঞেস করলাম, কেনো সে এ কাজ করলো।
তখন আপু বললোঃ- ” সোহাগের সাথে আমার কখনও কথা হয়নি প্রথম বার-ই সে আমাকে প্রপোজাল দেয় এতে আমি ইতস্তত বোধ করি কিন্তু পরশ দেখতে খারাপ হলেও সে গত ২ মাসে আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড হয়েছে। পরশ আমার খুব কেয়ার করে, আমার কোন দিকটায় ভালো হবে তা সব সময় চিন্তা করে, খুবই বন্ধুসুলভ একজন মানুষ। তাই সে যখন আমাকে প্রপোজ করে তখন আমি না করতে পারিনি কারণ লাইফ পার্টনার হিসেবে এরকম একজন মানুষকেই দরকার। “
উপরের দুই টা উদাহরণ এর সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং ফানেল ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আপনি যখন কোন কাস্টমার কে ডিরেক্ট ফোর্স করবেন প্রোডাক্ট টি কেনার জন্য সে কিনবে না কিন্তু আপনি যখন তাকে বোঝাবেন প্রোডাক্ট এর উপকারিতা কি, প্রোডাক্ট টি কিনে সে কিভাবে উপকৃত হতে পারে তখন সে প্রোডাক্ট টি কিনবে। নিশ্চয়ই এখন সেলস ফানেল সম্পর্কে আপনি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক এটি কিভাবে কাজ করে।
- ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা ও ভবিষ্যৎ!
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি? কেন করবো? কিভাবে করবো?
- কনটেন্ট মার্কেটিং কী? এর গুরুত্ব ও সুবিধাগুলো!
- ফেসবুক মার্কেটিং মানে কি? কিভাবে ফেসবুক মার্কেটিং করবেন?
- এফিলিয়েট মার্কেটিং –ঘরে বসে সহজ
- এফিলিয়েট কি – ঘরে বসে সহজ আয়
- এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার উপায়
সেলস ফানেল কিভাবে কাজ করেঃ বাজারে সাধারণত তিন ধরনের ক্রেতা থাকে।
প্রথমতঃ
এই ধরনের ক্রেতা পণ্য টি কেনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সে নিজেই খুজতে থাকে পণ্য টি ক্রয় করার জন্য। সে সেলার কে খুঁজে পেলেই প্রোডাক্ট টি ক্রয় করতে প্রস্তুত। তাই প্রোডাক্ট এর বিজ্ঞাপন তার চোখে পরা মাত্রই প্রোডাক্ট টি সেল হয়ে যাবে নিশ্চিত। এরা হলো হট কাস্টমার। তবে বাজারে এদের সংখ্যা খুব বেশি নেই। ১০ শতাংশের মতো হট কাস্টমার বাজারে রয়েছে।
এখানে একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে নেটওয়ার্ক বিহীন জীবন যাপন যেনো কষ্টকর হয়ে উঠেছে। মানুষ চায় কম দামে বেশি মেগাবাইট। এই ধারণা কে টার্গেট করে স্কিটো সিমের ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। তারা প্রচার করেছে কম দামে বেশি মেগাবাইট। তাই যারা ছিলো হট কাস্টমার তারা স্কিটো সিম কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পরেছে।
দ্বিতীয়তঃ
এই ধরনের কাস্টমার দের পণ্য টি না কিনলেও চলে। তবে সেলস ফানেল তৈরির মাধ্যমে তাদের ইম্প্রেস করা যায়। প্রোডাক্ট সম্পর্কে লোভনীয় বিজ্ঞাপন, প্রতিষ্ঠান এর প্রতি আস্থা তৈরি, বিভিন্ন অফার তাদের মন কে কাবু করতে পারে। এ পর্যায়ে তাদের কে ক্রেতায় কনভার্ট করা কিছু টা সহজ। বাজারে এদের সংখ্যা মাত্র ৩০ পার্সেন্ট।
তৃতীয়তঃ
এই ধরনের ক্রেতাদের পণ্য ক্রয় করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নাই এমনকি এরা পণ্যের সার্ভিস সম্পর্কে জানেও না। এমন ও হতে পারে তাদের পণ্য টি সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা রয়েছে। এদের কে কোল্ড কাস্টমার বলা হয়। বাজারে এদের সংখ্যা ৬০ পার্সেন্ট।
সেলস ফানেল তৈরি করার মাধ্যমে সাধারণত এই ধরনের কোল্ড কাস্টমার দের কে টার্গেট করা হয়। বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট টি সম্পর্কে অবগত করা হয়। তাদের কে বোঝানো হয় কিভাবে প্রতিষ্ঠান টির পণ্য তাদের কাজে দিবে। কিভাবে প্রোডাক্টগুলো ইউজ করলে তাদের সুবিধা হবে, জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। এরকম বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন তাদের সামনে উপস্থাপন করার মাধ্যমে তারা প্রোডাক্ট টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে থাকে।
তারা ভাবতে থাকে পণ্য টি কিনলে তাদের ভালোই হবে। কিছু শ্রম লাঘব হবে। এই সমস্ত কথা ভেবে তারা প্রোডাক্ট টি কিনতে আগ্রহী হয় এবং এক পর্যায়ে তারা প্রোডাক্ট টি কেনে। এভাবে সেলস ফানেল এর মাধ্যমে একজন কোল্ড কাস্টমার কে হট কাস্টমার এ কনভার্ট করা যায়। কিন্তু যদি ডিজিটাল মার্কেটিং ফানেল তৈরি করা না হত তাহলে কোল্ড কাস্টমার থেকে কখনোই অর্ডার পাওয়া যেত না। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ডিজিটাল মার্কেটিং ফানেল কিভাবে কাজ করে। তাই আপনি ও বিজনেস শুরু করার পূর্বে ডিজিটাল মার্কেটিং ফানেল এর গুরুত্ব টা অনুভব করুন। সেলস ফানেল তৈরি করা নিয়ে একটু ভাবুন।