আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় একটা ওয়েবসাইট তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য কি? আপনার অ্যান্সার টা কি হবে? নিশ্চয়ই আপনি একটু ডীপলি ভেবে বলবেন ” ট্রাফিক জেনারেট করা “। কারণ একটি ওয়েবসাইটের ট্রাফিক সংখ্যা বাড়লে ওয়েবসাইটের পাবলিসিটি ও বেড়ে যাবে এবং পাবলিসিটি বাড়লে আপনার বিজনেসের সেল ও বাড়বে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন একজন ভিজিটর এর জন্যই আমরা তার উপযুক্ত করে ওয়েবসাইট টি তৈরি করি। আর একজন ভিজিটর এর কাছে আপনার ওয়েবসাইট টি কে পৌঁছৈ দিতে এস.ই.ও প্রধান ভূমিকা পালন করে। এই SEO এর দুই টি পার্ট হলো অন পেজ এস.ই.ও এবং অফ পেজ এস.ই.ও। আজ আমরা এদের পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
অনপেজ ও অফপেজ এসইও এর ভেতর পার্থক্যঃ
দিন যত যাচ্ছে সার্চ ইঞ্জিনগুলো (গুগল, ইয়াহু, বিং) ততই আপডেট হচ্ছে। ২০১০ সালে যেখানে SEO এর কাজগুলো তুলনামূলক সহজ ছিলো ২০২৩ সালে এসে ঠিক একই কাজ অনেক বেশি ইফোর্ট, কেয়ারফুলি এবং নিউ টেকনিক অ্যাপ্লাই করে করতে হয়। এই SEO এর দুই টি পার্ট হলো অন পেজ ও অফ পেজ SEO।
অনপেজ এসইও:
অনপেজ এসইও হলো আপনার ওয়েবসাইট এর ভেতরের যাবতীয় কাজ অর্থাৎ আপনি আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগের ভেতরে যে ফোকাস কিওয়ার্ড, মেটা ডেসক্রিপশন, এইচ ট্যাগের ব্যবহার ইত্যাদি করে থাকেন সেগুলোই হলো অনপেজ এসইও.
আরও সহজ ভাবে বোঝার জন্য একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই। ধরুন, আপনি একটি নতুন মেডিসিন এর দোকান দিচ্ছেন। দোকানে ঔষধ তোলার আগে আপনাকে সেল্ফ আনতে হবে, লাইট লাগাতে হবে, ঘরে রঙ করতে হবে ইত্যাদি। তেমনই ওয়েবসাইট এর ভেতরে ও এরকম কিছু কাজ রয়েছে। ওয়েবসাইটের ভেতরের ওই সমস্ত কাজ কে বলে অন পেজ এস.ই.ও। অন পেজ অপটিমাইজেশন এর ক্ষেত্রে যে যে কাজ করতে হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
ইউ.আর.এল সেট-আপঃ
URL এর ফুল ফর্ম হচ্ছে ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর। এটি আসলে একটা ওয়েবসাইট এর অ্যাড্রেস। ইউ.আর.এল কয়েকটি অংশে বিভক্ত। Http, www এবং এর পরে আপনার ওয়েবসাইটের নাম। তারপর আপনার ওয়েবসাইট টি যদি কমার্শিয়াল সাইট হয়ে থাকে তাহলে .com, কোনো সংস্থা হয়ে থাকলে .org ইত্যাদি। যেমন আমাদের ওয়েবসাইটের ইউ.আর.এল https://yappobd.com
এখন কথা হচ্ছে ইউ.আর.এল আমাদের কিভাবে সেট করা উচিত। সহজ কথায় বলতে গেলে আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট কিংবা কোনো পোস্ট কে গুগলে র্যাংক করাতে চান তাহলে কিছু নির্ধারিত গঠন আপনাকে ফলো করতে হবে। ধরুন আপনি একটি আর্টিকেল লিখলেন “How to write a perfect article?” তাহলে এই আর্টিকেলের ইউ.আর.এল আপনি কিভাবে সেট করবেন? ইউ.আর.এল সেট আপের সময় প্রথমেই কিওয়ার্ড রাখা গুগলের একটি র্যাংকিং ফ্যাক্টর। তাই এমন করে ইউ.আর.এল সেট করতে হবে যাতে মেইন কিওয়ার্ড টি সেখানে স্থান পায়। যেমন ধরুন এখানে মেইন কিওয়ার্ড টি হচ্ছে perfect article. এক্ষেত্রে আপনার আর্টিকেল এর ইউ.আর.এল হবে নিম্নরূপঃ-
http://www.example.com/perfect-article-how-to-write/
মেটা টাইটেলঃ
অন পেজ অপটিমাইজেশন এর ক্ষেত্রে মেটা টাইটেল এর উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমরা যখন গুগলে কোনো কিছু লিখে সার্চ করি তখন যে পেজগুলো আমাদের সামনে আসে সেই পেজের টপিক-ই মেটা টাইটেল। এটা কে H1 Tag বলা হয়ে থাকে। মেটা টাইটেল টি আপনাকে ৬০ ওয়ার্ডের ভেতর সাজাতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মেটা টাইটেলে কিওয়ার্ড টি থাকে।
মেটা ডেসক্রিপশনঃ
গুগলে কোন কিওয়ার্ড লিখে সার্চ করলে মেটা টাইটেল এর নিচে আমরা যে ১৬০ ক্যারেক্টার এর লেখা দেখতে পাই সেটাই মেটা ডেসক্রিপশন। অন পেজ SEO এর ক্ষেত্রে মেটা ডেসক্রিপশনের দিকে নজর দিতে হবে গুগলে র্যাংক পাওয়ার জন্য। এক্ষেত্রে মেটা ডেসক্রিপশনে একবার কিওয়ার্ড টি রাখতেই হবে। তবে যত সামনের দিকে আপনার কিওয়ার্ড টি কে ন্যাচারালি পুশ করতে পারবেন ততই গুগলে ভালো র্যাংক করবে। মেটা ডেসক্রিপশন এ ১৬০ ক্যারেক্টার এর ভিতরে আর্টিকেলের মেইন অংশটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন।
ইমেজ অপ্টিমাইজডঃ
ইমেজের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই image alt tag ব্যবহার করতে হবে। ১০০ কেবি এর নিচে ইমেজ অপ্টিমাইজড করার চেষ্টা করুন। ইমেজের ডেসক্রিপশনে কিওয়ার্ড টি ব্যবহার করা উচিত।
ইন্টারনাল লিংকিংঃ
ইন্টারনাল লিংক হলো একই ওয়েবসাইট এর লিংক ব্যবহার করা। অর্থাৎ আমাদের ওয়েবসাইট এর ব্লগে বিভিন্ন পয়েন্টে নিজেদের অন্য রিলেটেড আর্টিকেলের যে লিংক গুলো এড করা আছে সেগুলোই হলো ইন্টারনাল লিংক। ধরুন, আমার এই আর্টিকেল এ আমি এই ওয়েবসাইটেরই অন্য একটি আর্টিকেল এর লিংক বা ইউ.আর.এল এড করে দিলাম। সেটাই হবে আমার ওয়েবসাইট এর ইন্টারনাল লিংক। ওয়েবসাইট এস ই ও এর জন্য এটা জরুরী একটা বিষয়। ওয়েবসাইট এসইও কেন গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে আর বিস্তারিত জানতে ঘুরে আসতে পারেন আমাদের এই ব্লগে
এক্সটার্নাল লিংকঃ
আমি যে এই আর্টিকেল টা লিখছি, এই আর্টিকেল এ যদি আমি আপনার ব্লগের একটি আর্টিকেলের URL link দিয়ে দেই তাহলে সেটা হবে আপনার ওয়েবসাইট এর জন্য একটা এক্সটার্নাল ব্যাকলিংক। এভাবে আপনি অন্যদের ওয়েবসাইটে নিজের ব্লগের আর্টিকেলগুলোর লিংক দিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কোয়ালিটি ব্যাকলিংক পেতে পারেন।
সাইট স্পিডঃ
অন পেজ SEO এর ক্ষেত্রে সাইড স্পিড অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড ভালো না হলে ইউজার আপনার ওয়েবসাইট এ ঢুকবেই না। ফলে আপনার ওয়েবসাইট সহজে গুগলে র্যাংক করতে পারবে না। আপনার ওয়েবসাইট এর স্পিড বাড়ানোর জন্য ভালো এজেন্সি থেকে হোস্টিং করিয়ে নিতে পারেন।
অফপেজ এসইও:
অফপেজ এসইও হলো ওয়েবসাইট এর বাইরের যাবতীয় কাজ। ধরুন আপনার মেডিসিন এর দোকান টা আপনি এমন যায়গায় দিয়েছেন যে, কেও জানেনা ওইখানে মেডিসিন পাওয়া যায়। তাহলে কি কোনো কাস্টমার আপনার দোকানে আসবে? কখনোই না। আপনি যখন আপনার দোকানের প্রচার চালাবেন তখন আপনার দোকানে কাস্টমার আসা শুরু করবে। ঠিক এভাবেই অফপেজ এসইও একটি ওয়েবসাইটের পাবলিসিটি অর্জনে ভূমিকা রাখে।
চলুন অফপেজ এসইও এর কিছু পার্ট সম্পর্কে জেনে নেই।
ব্লগ কমেন্টিংঃ
আপনি আপনার ওয়েবসাইট এর লিংক অথবা একটি আর্টিকেলের লিংক অন্য ভালো একটি রিলেটেড সাইটের ব্লগের কমেন্ট বক্সে শেয়ার করতে পারেন। এর ফলে আপনি খুব সহজেই লিংক বিল্ড করে ভালো ট্রাফিক পেতে পারেন।
গেস্ট পোস্টিংঃ
গেস্ট পোস্টিং হলো আপনি অন্য একজনের সাইটে গিয়ে কন্টেন্ট/ব্লগ ক্রিয়েট করলেন এবং আপনার সাইটের লিংক সেখানে এড করে দিয়ে আসলেন। এতে যে লাভটা আপনার হলো তা হলো, ভিজিটররা আপনার সাইটের লিংক এ ক্লিক করে আপনার সাইটেও ভিজিট করবে। এতে আপনি ভিজিটর ও পেলেন এবং আপনার ওয়েবসাইট এর ব্র্যান্ড প্রোমোশন ও হলো।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টিংঃ
এখন সবাই সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে। তাই আপনি ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম কিংবা লিংকডইন এর মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার প্রোফাইল ক্রিয়েট করে নিয়মিত কন্টেন্ট দিতে থাকুন। এতে আপনি সহজেই ভিজিটরদের কে আপনার সাইটে নিয়ে আসতে পারবেন। এটি খুব ভালো অফ পেজ Seo ইম্প্রুভমেন্ট এর কাজ করে।
সোশ্যাল বুক মার্কিংঃ
খুব দ্রুত ট্রাফিক জেনারেট এবং ব্যাকলিংক তৈরি করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সোশ্যাল বুক মার্কিং সাইটগুলো। আপনি আপনার ওয়েবসাইট এর লিংকগুলো বুক মার্ক হিসেবে সেভ করে রাখতে পারবেন এখানে। এরকম কিছু সাইট হলোঃ reddit, tumblr, pinterest ইত্যাদি। কেও যখন আপনার বুকমার্ক গুলো দেখবে এবং শেয়ার দিবে তখন সেই লিংকের মাধ্যমে আপনি ট্রাফিক ও ব্যাকলিংক পেয়ে যাবেন।
এরকম আরও অনেক অফ পেজের পার্ট রয়েছে যেমনঃ আর্টিকেল সাবমিশন, ভিডিও সাবমিশন, ইনফোগ্রাফিক্স সাবমিশন ইত্যাদি ।
পরিশেষেঃ
গুগলে খুব ভালো র্যাংক পেতে হলে অন পেজ, অফ পেজ ত্রুটিহীনতার সাথে অপটিমাইজেশন করতে হবে। এজন্য দরকার ভালো একজন SEO expert আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট এর জন্য SEO expert খুঁজে থাকেন তাহলে আমাদের সাথে আজই যোগাযোগ করুন! আমরা কথা নয় কাজ দিয়ে আমাদের ক্লায়েন্টদের কে সন্তুষ্ট করি।